হঠ্যাৎ করেই বিয়েটা হয়ে গেলো''
**হঠ্যাৎ করেই বিয়েটা হয়ে গেলো**
আজকে যে আমার বিয়ে হবে সেটা আমি আজকে সকালেও ভাবিনি, কি থেকে কি হয়ে গেলো নিজেও জানি না। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার হলো যার সাথে আমার বিয়েটা হয়েছে সেটা আর কেউ নয়, আমার ভাবি হুম আমার আপন বড় ভাইয়ের বউ, যাকে আজকে সকালেও আমি ভাবি বলে ডেকেছি কিন্তু এখন আমার বউ।।
এখন দাঁড়িয়ে আছি বাসার ছাদের উপর, আর ভাবি মানে আমার বউ বাসর ঘরে অপেক্ষা করছে আমার জন্য।।
কিছু বুঝতেছেন না তো চলেন পুরো বিষয় টা আপনাদের বুঝিয়ে বলি।।
আজ থেকে প্রায় ১ বছর আগে ভাবির আর ভাইয়ার বিয়ে হয়, খুব সুন্দর দিন যাচ্ছিলো ভাইয়া ইটালি থাকতো, আমি আম্মু আব্বু বাড়িতে থাকতাম, আমি তখন অনার্স ৩য় বর্ষের স্টুডেন্ট ছিলাম, ভাইয়া আর আমার সম্পর্ক ছিলো বন্ধুর মতো।।
দুজনে খুবই ক্লোজ ছিলাম, বাবার একটা দোকান ছিলো, ভাইয়া ইটালি যাওয়ার পর বিক্রি করে দিয়েছে কারণ ভাইয়ার নিষেধ ছিলো বাবা যেন আর কোনো কাজ না করে, এভাবেই আমাদের দিন যাচ্ছিলো আমিও বন্ধুবান্ধব পড়ালেখা আড্ডা এসব নিয়েই অসাধারণ লাইফ কাটাচ্ছিলাম একটা ঝড় এসে আমাদের এই সুখি লাইফটাকে তছনছ করে দিয়েছে।।
ভাইয়া বিদেশ থেকে বাড়িতে আসলো, আমরা ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখতে শুরু করে দিলাম যদিও ভাইয়া বিয়ের জন্য রেড়ি ছিলোনা তবুও আব্বু আম্মুর জোরাজোরিতে রাজি হয়ে গেলো।।
অনেক গুলো মেয়ে দেখার পর একটা মেয়েকে ভাইয়ার জন্য আমরা পছন্দ করি মেয়েটা দেখতে অসাধারণ
প্রথম দেখায় যে কারো পছন্দ হয়ে যাবে ভাইয়ার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি ভাইয়াও মেয়েটা পছন্দ করে ফেললো মেয়েটা আমার সাথেই পড়তো, অর্থাৎ অনার্স ৩য় বর্ষে শুধু ক্যাম্পাসটা ভিন্ন ছিলো নাম হচ্ছে অবন্তী।।
দুই ফ্যামিলির সম্মতিতে মহা ধুমধামে ভাইয়ার বিয়েটা হয়ে গেলো।।
ভাইয়া আর ভাবির আন্ডারেস্টিং টা ছিলো অসাধারণ, দুজন দুজনকে অল্প দিনেই অনেক ভালোবেসে ফেললো সেটা উনার হাবভাব দেখলেই বুঝা যায়।।
বিয়ের পরে ভাইয়া ভাবিকে নিয়ে অনেক ঘুরাফেরা করলো,, আমিও ভাবির সাথে অনেক মস্করা করতাম, ভাবি সব ক্লোজ ভাবে নিতো।।
ভাবিও অল্প দিনে আব্বু আম্মুর মন জয় করে নিলো, আম্মু নিজের হাতে ভাবির মাথায় তেল দিয়ে দেয়, রান্না শিখায়।।
আব্বু আর আম্মু ভাবিকে কখনো ছেলের বউ হিসেবে দেখেনি নিজের মেয়ের মতোই দেখেছে ভাবির আব্বু আম্মুকে নিজের বাবা মায়ের মতোই সেবাযত্ন করতো, সব কিছুতে হেল্প করতো।।
ভাবি বাসায় আসার পর থেকে যেন বাসাটা অন্যরকম হয়ে গেলো, খুব সুন্দর ভাবে আমাদের দিন যাচ্ছিলো।।
বিয়ের দুই মাস পরে ভাইয়ার ছুটি শেষ, তাই আবারও ইটালি চলে যেতে হবে যদিও ভাইয়ার যাওয়ার মতো মন মানসিকতা ছিলো না কারণ নতুন বিয়ে করেছে আরো কিছু দিন থাকার ইচ্ছা ছিলো বাট নিজের ক্যারিয়ার ফ্যামিলির কথা চিন্তা করে ভাইয়া ইটালি চলে গেলো।।
ভাইয়া চলে যাওয়ার প্রতিদিনই আমাদের সবার সাথে কথা হতো, আমি এটা ওটা বলে ভাইয়াকে খেপাতাম এভাবে কিছু দিন চলে যায়।।
একদিন আমি কলেজ থেকে বাসায় আসছি এমন সময় একটা বিদেশি নাম্বার থেকে কল আসে, আমি ভেবেছিলাম ভাইয়া কল দিয়েছে কিন্তু না, আমি কলটা রিসিভ করলাম।।
আমি হ্যালো ভাইয়া কেমন আছিস।।
কিন্তু ওই খান থেকে অন্য একটা লোক বললো।।
আমি আপনার ভাই না আপনার নাম কি রাসেল।।
আমি হুম আমিই রাসেল কিন্তু আপনি কে আমাকে কিভাবে ছিনেন।।
ওই লোক বলে আমি তোমার ভাইয়ের বন্ধু একসাথেই কাজ করি আমার নাম রহিম।।
আমি) ও আচ্ছা তো ভাইয়া কেমন আছে।।
রহিম (চুপ)
আমি) কি ব্যাপার চুপ করে আছেন কেন ভাইয়া কেমন আছে।।
রহিম) তোমার ভাই
আমি) হুম আমার ভাই কি? কি? হয়েছে ভাইয়ার বলেন।।
রহিম) তোমার ভাই আর বেঁচে নেই।।
কথাটা শুনার সাথে সাথেই আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো, আমি নিজেকে আর সামলাতে না পেরে মাটিতে বসে পড়ি চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসলো।।
আমি) কি বলছেন এটা হতে পারে না আমি সকালেও ভাইয়ার সাথে কথা বলেছি কাঁদতে কাঁদতে।।
রহিম) হুম ঠিকই বলছি কিছুক্ষণ আগে তোমার ভাই ডিউটিতে যাচ্ছিলো প্রতিদিন আমি আর তোমার ভাই একসাথেই কাজে যেতাম কিন্তু আজকে আমার সিপ্ট সকালে ছিলো আর তোমার ভাইয়ের রাতে একটু আগে বাস উলটে তোমার ভাই সহ ওই কোম্পানির প্রায় ১৩ জন মারা যায় বাকিদের অবস্থাও খুব ভালো না।।
আমি) না আমার বিশ্বাস হয়না আপনি ভালো করে দেখেন, আমার ভাইয়ের কিছু হয়নি।।
রহিম) দুই দিনের মধ্যে লাশ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।।
এ কথা বলেই রহিম ভাই কলটা কেটে দিলো আমি যেন পাথর হয়ে গেলাম মুখ দিয়ে কোনো কথা আসছে না।।
আমি আব্বু আম্মুকে কি জবাব দিবো কি বলে বুঝাবো ভাবি কে মাত্র দুই মাস পরে বিধবা হয়ে গেছে এটা শুনলে ভাবির কি অবস্থা হবে আব্বু আম্মুকে যদি বলি তোমাদের বড় সন্তান আর নেই কি হবে উনাদের।।
নাহ আমি আর কিছু ভাবতে পারছিনা মাথাটা ঘুরতেছে তাড়াতাড়ি বাসায় যাই।।
একটা রিক্সা নিয়ে তাড়াতাড়ি বাসায় চলে গেলাম।।
কলিং বেল দেওয়ার একটু পর ভাবি এসে দরজা খুলে দেয়।।
ভাবি বলে কি ব্যাপার আজকে আমার দুষ্টু দেবরটা এতো তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসছে কেন নিশ্চই কলেজ ফাঁকি দিয়েছে।।
ভাবির কথা শুনে আমার ভিতরটা আবারও মোছড় দিয়ে উঠলো, আমি কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেলাম দরজা লাগিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম পানি ছেড়ে দিয়ে ইচ্ছামতো কাঁদতে লাগলাম।।
অনেকক্ষণ পর বের হলাম ভাবি আমার রুমের দরজায় টোকা দিতে লাগলো।।
ভাবি। কি ব্যাপার দেবর সাহেব মন খারাপ কেন কি হয়েছে।।
মনে মনে বললাম কি হয়েছে সেটা যদি শুনেন তাহলে আপনি নিজেকে স্থির রাখতে পারবেন না ভাবি যেন কিছু না বুঝে সেজন্য বললাম কিছু না।।
ভাবি বলে না না, কিছু তো একটা হয়েছে চোখমুখ লাল কেন।।
আমি বললাম তো ভাবি কিছু হয়নি।।
ভাবি বলে আচ্ছা খেতে চলো, আব্বু আম্মু বসে আছে।।
আমি বলি আপনারা খেয়ে নেন আমি খাবো না।।
ভাবি কিছু একটা বলতে চেয়েছিলো কিন্তু আমি তাড়াতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে গেলাম।।
যেখানেই যাই ভাইয়া স্মৃতি গুলো মনে পড়তে লাগলো, মনে হচ্ছে ভাইয়া আমার পাশে গল্প করতেছে।।
নিজেকে কোনো ভাবেই শান্তনা দিতে পারতেছিনা।।
রাতের বেলা রুমে বসে বসে ভাইয়ার ছবি গুলো দেখতেছি আর চোখ দিয়ে পানি ঝরতেছে এমন সময় আম্মু আমার রুমে আসলো।।
আম্মু কিরে কি করিস।।
আমি বলি কিছু না।।
আম্মু বলে কাঁদতেছিস কেন।।
আমি কই না মনে হয় চোখে কিছু একটা পড়েছে।।
আম্মু বলে মিথ্যা বলবি না তোর হাতে কার ছবি।।
আম্মু ছবি গুলো আমার হাত থেকে নিয়ে দেখে আমার আর ভাইয়ার ছবি তারপর বলে।।
আম্মু ভাইয়ের কথা মনে করে কাঁদতেছিস।।
আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে আম্মুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম।।
আম্মু এই হঠ্যাৎ করে তোর কি হলো।।
আমি বলি কিছু না ভাইয়াকে খুব মিস করতেছি।।
আম্মু বলে পাগল একটা ওরে কল দিয়ে কথা বল ও আচ্ছা ভালো কথা সকাল থেকে তোর ভাই কল দেয়নি অবন্তী নাকি কল দিয়েছিলো বার বার মোবাইল অফ পাচ্ছে তুই একটু দেখতো।।
আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়ালাম তারপর আম্মু রুম থেকে চলে যায় আমি আবারও ছবি গুলো দেখতে লাগলাম।।
এভাবে দুই দিন চলে গেলো আম্মু আব্বু ভাবি সবাই অনেক টেনশন করতেছে ভাইয়ার কোনো খবর নাই আমি জেনেও উনাদের কিছু বলতে পারছিনা।।
পরের দিন একটা অচেনা নাম্বার থেকে কল আসে।।
আমি বলি হ্যালো।।
লোক্টা বলে আপনার নাম কি রাসেল।।
আমি বলি হ্যাঁ আপনি কে
ওইলোক বলে আমি কাস্টমস থেকে বলতেছি, আপনার ভাইয়ের লাশ এসেছে এসে নিয়ে যান।।
আমি আর কোনো কিছু না বলে দৌড় দিলাম একটা গাড়ি নিয়ে তাড়াতাড়ি এয়ারপোর্ট গেলাম দেখলাম অনেক গুলো লাশ একসাথে শুয়ে আছে।। দেখেই ভিতরটা কেঁদে উঠলো।।
তারপর কয়েকজন পুলিশ লাশ গুলোকে পোস্টমর্টেম করার জন্য লাশবাহি গাড়িতে উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেলো।।
অনেক রিকুয়েস্ট করার পরও ওরা আমাদের কারো কথা শুনলো না পুলিশের পিছে পিছে হাসপাতালে গেলাম অনেকক্ষণ ধরে হাসপাতালে বসে আছি।।
চারপাশে অন্যান্য লোক গুলো কেঁদেই যাচ্ছে, আমারও চোখ দিয়ে পানি ঝরতেছে এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমার ভাই আর বেঁচে নেই।।
তারপর প্রত্যেকটা লাশ তাদের আত্নীয়দের নিকট দিয়ে দেওয়া হচ্ছে আমি ভাইয়ার লাশের পাশে দাঁড়িয়ে রইলাম ভাইয়ার চেহারার দিকে তাকিয়ে আছি।।
দেখে মনে হচ্ছে আমার ভাইটা এখনো হাসতেছে, কিছুই হয়নি কি সুন্দর ঘুমাচ্ছে আমার ভাই।।
আমি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে কাঁদতেছি এমন সময় কেউ একজন কাঁধের উপর হাত দেয় ঝাপসা চোখে তাকিয়ে দেখি একজন ডাক্তার।।
ডাক্তার বলে, লাশ বেশিক্ষণ উপরে রাখা ঠিক হবে না মেডিসিন দেওয়া উনাদের শরীরে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব দাফনের ব্যবস্থা করেন।।
আমি আর কিছু বললাম না হাসপাতাল থেকে একটা এম্বুলেন্স নিয়ে ভাইয়ার লাশটা উঠালাম গাড়ি তার আপনমনে চলতেছে আমি আব্বু আম্মু আর ভাবিকে কি জবাব দিবো।।
তারপর এম্বুলেন্স আমাদের বাসার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, এম্বুলেন্স এর আওয়াজ শুনে আব্বু, আম্মু, ভাবি সহ আশেপাশের সবাই বাইরে আসলো, আমাকে নামতে দেখে সবাই একটু অবাক হলো।।
আমি এম্বুলেন্স এর পেছনের দরজাটা খুলে ভাইয়ার লাশটা বের করলাম, আম্মু আব্বু, ভাবি সবাই এগিয়ে আসলো।।
আব্বু কিরে এম্বুলেন্স কেন আর এটা কার লাশ।।
আমি কোনো কথা না বলে ভাইয়ার মুখের উপর থাকা সাদা কাপড়টা সরিয়ে দিলাম।।
Comments
Post a Comment